স্থাপিত -১৯৮৭ খ্রি, EIIN ১১৪৪৯৮,বিদ্যালয় কোড-৪৬৫৫,উপজেলা কোড ১৯৭, জেলা কোড ২৪,এসএসসি কেন্দ্র কোড ২৮৯ ,ডাকঘর-হতেয়া রাজাবাড়ি,উপজেলা-মির্জাপুর,জেলা-টাঙ্গাইল
লেখক: মো: মোকছেদ আলীমাস্টার,
প্রতিষ্ঠাতা সহকারি শিক্ষক
(অবসর প্রাপ্ত)
বলিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়,
মির্জাপুর, টাংগাইল।
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আমার বাবা মরহুম জমশের আলী মাতাব্বর সাহেবকে যিনি এই বালিয়াজান /এলাকার মানুষের জন্য মসজিদ এবং মাদ্রাসার
জন্য মুক্ত হস্তে (১২+৬০) ৭২ শতাংশ জমি দান করে শিক্ষার বীজ বপন করে গেছেন।আরও
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি মরহুম জমশের মাতাব্বর সাহেবের সন্তানদের বালিয়াজান উচ্চ
বিদ্যালয়ের জন্য মুক্ত হস্তে যথেষ্ট পরিমাণ জমি দান করার জন্য। তার পর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
করি আমাদের হাতে হাত রেখে বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন এবং ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে ফুলের বাগানে ফুল ফুটিয়েছেন। গ্রামটি ছিল বিদ্যালয়বিহীন
এবং অত্যন্ত অবহেলিত দরিদ্র এলাকা-না ছিল বাজার, রাস্তাঘাট , ছিল না বিদ্যুৎ। কিন্তু অত্যন্ত আনন্দের বিষয় বিদ্যালয়গুলো নির্মিত হওয়ার পর আলোকিত হয়েছে গ্রাম এবং অসংখ্য ছেলে-মেয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি বেসরকারি চাকরি করছে।শিক্ষার কারণে গ্রামের পরিবেশের যতেষ্ঠ উন্নতি হয়েছে।দিনটি ছিল দিনটা ছিল ১৯৭৯ সাল আমি বি. কম পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আসিলাম একটানা তিনটি বছর বাড়ীতে সংসার করতেছিলাম এমতাবস্থায় গ্রামের কিছু লোকজন আমাকে এবং আমার ভাইদেরকে ডাক দিয়ে একত্রে বসেন। আলোচনার প্রথমেই হাইস্কুল সম্পর্কে কথাটি উঠে আসল কিন্তু এত জায়গা কে দিবে? এমন সময় কিছু জ্ঞানী লোক আমাদের কাছে স্কুলের জন্য জমি চাইলেন। তখন আমার বড় ভাই মজিবর রহমান এবং ছোটভাই আলি আহাম্মদ ও মোহাম্মদ আলী এক বাক্যে স্কুলের জন্য জমি দিতে রাজি হয়ে গেলেন [ উল্লেখ্য:আমাদের পাশাপাশি আমাদের চাচাতো ভাই শামছুল, মাদব কিছু জমি দান করে অত্র এলাকায় শিক্ষার আলো জ্বালাতে সাহায্য
করে। তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ]। আল্লাহর রহমতে কিছু দিন পর গ্রামের
লোকজন নিয়ে আবার একটা মিটিং –এ বসি। তারপর টাকা সংগ্রহ শুরু করলে সর্ব প্রথমেই মো: হেলুমুদ্দীন পিতা নেপাল উদ্দিন সংগ্যে স্কুলের জন্য ২৫০ টাকা দিয়ে ফেললাম। এই তো শুরু হয়ে গেল টাকা কালেকশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঠ কালেকশন। গ্রামের প্রায় সবাই কাঠ কাটে এবং কাঁধে
করে কাঠ বহন করে সে কি আনন্দ সবার প্রাণে! এমনি করে একদিন ১৯৮৭ সালে ৬০ হাত একটি ঘর দিয়ে ফেললাম। তারপর শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। সে কি আনন্দ ! এলাকার সকল মানুষ তাদের ছেলে-মেয়েদের কে একবাক্যে আমাদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করলেন।যাই হউক ১৯৮৮ ইং সালের জানুয়ারি মাসের ০১ তারিখ থেকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি শুরু করলাম এবংসাথে ২ ক্লাস শুরু করলাম। বড় ভাই মরহুম মজি বর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের পরিচালনার কাজ শুরু করলাম। আমি মোকছেদ মাস্টার, হাবিবুর রহমান মাস্টার, মনির মাস্টার,
দুলাল, সাইফুল ইসলাম, ছানোয়ার স্যার, নুরুল ইসলাম এবং দীন বন্ধু বর্মণ কতিপয় স্যারদের কে নিয়ে বিনা পয়সায় দীর্ঘ ৬ বৎসর বিদ্যালয়টি পরিচালনা করলাম। তারপর বিদ্যালয়টি ৬-৭ বৎসর পরিচালনা করার পর প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহর কি রহমত ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি বেতন শুরু হয়। তখন শিক্ষকদের মধ্যে এবং গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। যাই হউক গ্রামের লোকজন প্রথমে বিদ্যালয়ের নাম করণ করেন বালিয়াজান জমশের মাতাব্বর জুনিয়র হাইস্কুল। আমরা আনন্দ চিত্তে মেনে নিলাম। কিছুদিন বিদ্যালয় পরিচালনা করার পর
গ্রামেরই কিছু লোক বিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করল এবং বলল যে জমশের মাতাব্বর এর নামে বিদ্যালয় হবে না। তখন আমাদের মধ্যে এবং গ্রামবাসীর মধ্যে বিশাল বাক্বিতন্ডার সৃষ্টি হলো। এক পর্যায়ে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার অবস্থা দেখা দিল। পরিশেষে আমরা চার ভাই মিলে বাবার নামে নামকরণের কথা ভুলে গিয়ে দেশের স্বার্থে অর্থাৎ গ্রামের বৃহৎ স্বার্থে বিদ্যালয়টি স্থাপনের লক্ষ্যে সকলের সংগে হাতে হাত মিলিয়ে বিদ্যালয়টি স্থাপন করলাম। ধীরে ধীরে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হতে লাগল। ছাত্র-ছাত্রী বাড়তে লাগল। সাথে সাথে বিদ্যালয়ের
পড়াশুনার মানও বাড়তে থাকলো। আল্লাহর রহমতে বিদ্যালয়ে এখন ২ টি পাকা ভবন নির্মিত হয়েছে। বিদ্যালয়টি নির্মিত হওয়ার
পর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে এবং পাকা রাস্তা ও ১ টি বাজার হয়েছে। এই জন্য লোকে বলে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। যে গ্রাম যত বেশি শিক্ষিত সে গ্রাম তত উন্নত। শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। বিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। কারণ আমার অনেক
ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কেউ প্রফেসর, কেউ কলেজের শিক্ষক, কেউ হাই স্কুলের শিক্ষক, কেউ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সরকারি বেসরকারি চাকরি করে। নাম মনে না থাকলেও আমার সোনার টুকরা ছাত্র-ছাত্রী সমাজের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত আছে। গর্বে আমার মন ভরে যায়। অনেক ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে পেরেছি। “মরেও শান্তি পাব”। আমার সহযোদ্ধা মরহুম শাহ্ আজিজুর রহমানের কথা মনে পড়ে কারণ তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। মরহুম জাফর স্যার কে মনে পড়ে। তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ
গুণী শিক্ষক ছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের যথেষ্ট মমত্ত্ববোধ ছিল। মরহুম রাইজ উদ্দিন মাতাব্বর ও মরহুম মাইন উদ্দিন মাতাব্বরের কথা মনে পড়ে কারণ বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ ভালবাসা ছিল। শিক্ষার আলো গ্রামের মানুষ দেখতে পায় স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার মাধ্যমে। সে ঘরটি নির্মিত ছিল মাটির কোঠা ঘর এবং সেই ঘরেই হাই স্কুলের প্রথম ক্লাস শুরু হয়। বেশ কয়েক বৎসর ক্লাশ করার পর হঠাৎ এক কালবৈশাখী ঝড়েএস নবীর ঘরটি ধুমড়ে-মুচড়ে লন্ড-ভন্ড করে ফেলে। তারপর গ্রামের মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে। আল্লাহর অশেষ রহমতে গ্রামের সোনার
টুকরো ছেলে মরহুম হযরত আলী সুবন সাহেববের বড় ছেলে হুমায়ুন কবীর পবিত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য মুক্ত হস্তে ১০,০০০ টাকা দান করলে পুনরায় ঘরটি নির্মাণ করা হয় এবং ক্লাশ শুরু হয়। পবিত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি মহান আল্লাহর রহমত আছে। মনে পড়ে ছামাদ মাতাব্বরের কথা এবং ইন্নৎ খা চালার কুদ্দুছ মাতাব্বরের কথা যিনারা প্রতিষ্ঠনের জন্য যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেণ। যাই হউক এলাকার মানুষের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবো না কারণ তারা অথ্যন্ত দরদের সাথে প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের ছেলে-মেয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানে ফুলের
বাগান তৈরি করেছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিকট আমরা চার ভাই প্রার্থনা করি দুনিয়া যতদিন আছে থাকবে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোও যেন টিকে থাকে তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থকতা পাবে।
বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয় যেন আমার জীবনের সাথে মিশে আছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সম্মৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ, পরিচালনা এবং প্রায় ৩১ টি বৎসর শিক্ষকতা শেষ করে ২০১৮ সালের ৩১ শে জানুয়ারি
অবসর নেওয়ার কারণে প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের ছেড়ে মনের ভিতরে কষ্ট নিয়ে বিদ্যালয় ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে বাড়িতে ফিরে এলাম। প্রিয় স্কুল প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের খুব বেশি মনে পড়েছিলো। ইচ্ছে ছিল আমার প্রিয় কলিজার টুকরো ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় মাঠে সবাইকে একসাথে একত্র
করে সুখ-দু:খের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষকতার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখবো। মনের মধ্যে অনেক আশা ছিল একটি সুন্দর বিদায় নেবো। কিন্তু একেবারে নিরবে
চলে এলাম। জানিনা কোন কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহ সহকারি শিক্ষকবৃন্দ এবং পরিচালনা কমিটির একজন লোকও আমার বিদায় অনুষ্ঠানের কথা মনে করলেন না! হয়তো তারা
আমার মনের ভেতরের অবস্থাটা, বিদ্যালয়ের প্রতি অনেক দিনের আবেগ, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ উপলব্ধি করতে পারেননি। হয়তো আল্লাহ আমার ভাগ্যে রাখেননি। যাই হউক, দীর্ঘ
চার বৎসর পর হেডমাস্টার সাহেব আমাকে অফিসে স্মরণ করেন এবং দু:খপ্রকাশ করেন। মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। আমিও আর অভিমান করে থাকতে পারিনি। অবশেষে, বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের বিদায় অনুষ্ঠানে আমারও বিদায় হয়। ইচ্ছা ছিল অনেক বড় করে
আমার অনেক দরদের প্রাক্তন সোনামনি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিদায় অনুষ্ঠান করবো এবং
বিদায় নিব কিন্তু আল্লাহ পাক অোমার ভাগ্যে তা রাখেনি। আল্লাহ যাহা করেন তাহা মানুষের মঙ্গলের জন্যই করেন। তবে, আজকের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমার কলিজার টুকরো ছাত্র-ছাত্রীদের পেয়ে মনের মধ্যে
প্রতিটি হৃদ স্পন্দনে যেন বড় প্রশান্তি অনুভব করছি! বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আমার প্রানের স্পন্দন! আমার মনের প্রশান্তি! এমন প্রশান্তি যেন মরণের পরেও অনুভব করি, আমার প্রাণের বিদ্যালয়-আমার প্রাণের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো থাকুক সেই প্রত্যাশা করি সব সময়। পরিশেষে সকলের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে অত্র বিদ্যালয়ের উতরোত্তর উন্নতি কামনা
করে এবং আমার শিক্ষকতা জীবনের অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে এখানেই যবনিকা
টানছি—–আল্লাহ হাফেজ।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার আলো সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই
বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয় বেশ সুনামের সাথেই পরিচালিত হয়ে আসছে। সুদক্ষ শিক্ষকমন্ডলী, প্রানপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর
আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। অনেকেই বিভিন্ন দেশে (প্রবাসে) কর্মরত রয়েছে এবং নিজ পরিবার ও এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখছে। ঐতিহ্যবাহী বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন-পুরাতন সকল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষককে নিয়ে আয়োজিত “পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২” নি:সন্দেহে বিদ্যালয় পরিবারের সাথে
সংশ্লিষ্ট সকলকে একসূত্রে ভ্রাতৃত্ত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পার হয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের সোনালি ফসল প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কোনো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি। তাই ২০২২ সালে এসে যাদের প্রচেষ্টায় বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচ থেকে বর্তমান ব্যাচ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। এই ধরণের
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান বিদ্যালয় পরিবারের জন্য বেশ আনন্দের ও গৌরবের। আমি “পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২”-এ আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি এবং মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
“পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২” –এর আয়োজকবৃন্দ,অংশীদারবৃন্দ ও সার্বিক সহযোগিতায়
সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও সুধীজনের প্রতি রইলো আন্তরিক মোবারকবাদ।
শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। যে গ্রাম বা দেশে যত বেশি শিক্ষিত লোক আছে সে গ্রাম বা দেশকে তত বেশি উন্নত বলা যায়।
শিক্ষা মানুষের ভেতরের অন্ধকার দূর করে অন্তরকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতির
নির্মাতা। আর বিদ্যালয় হলো মানুষ গড়ার কারখানা। গ্রামের অবহেলিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের মহান লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাযয়ক্রম শুরু হয় ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রিয় এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হিসেবে জীবনের ৩৫টি
বছর পার করেছি। ১৯৯৩ সালে প্রথম এসএসসি ব্যাচ পাশ করে বের হওয়ার পর ২০২২ সাল
পর্যন্ত ৩০টি ব্যাচ এসএসসি পাশ করবে। সুদীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আবার সবার সাথে অসংখ্য স্মৃতি-বিজড়িত এই প্রিয় বিদ্যালয় প্রঙ্গনে সন্তানতুল্য প্রিয় সোনার টুকরো ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মিলিত হতে পারা সত্যিই বড় আনন্দের! বড় সৌভাগ্যের! বালিয়াজান
উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জাপুর, টাংগাইলের এসএসসি ব্যাচ ১৯৯৩ ইং হতে ২০২২ ইং পর্যন্ত ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে কিছু উদ্যমী ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে গঠিত হয় বালিয়াজান হাই স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন”। উক্ত অ্যাসোসিয়েশন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে “পুনর্মিলনী
অনুষ্ঠান-২০২২” আয়োজনের মাধ্যমে এক মহামিলনের দ্বারা একে অপরের সাথে আবেগঘন
পরিচিতি ও মত বিনিময়ের যে সুযোগ তৈরি করেছে তার জন্য সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের অত্র
বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও দোয়া। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২-এ আসতে পেরে আমি আবেগাপ্লুত। প্রতিটি জাতি এবং প্রতিটি
মানুষেরই আছে অতীত ইতিহাস। যা থাকতে পারে সোনালী আভায় আচ্ছাদিত অথবা তিক্ততায় ভরা
বিষাক্ত। কোন জাতি অথবা কোন মানুষ যখন তার অতীতকে ভুলে যায় তখন সে জাতি বা মানুষের
জীবন হয় নিয়ন্ত্রণহীন যা একটি জাতি বা মানুষকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। সকল
ছাত্র/ছাত্রীর মধ্য হতে যতজন ছাত্র/ছাত্রী ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনে সফল হয়েছ
তাদের প্রতি আমার আশা থাকবে তোমাদের সাফল্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজ বা জীবনযুদ্ধে ব্যর্থ বন্ধু বান্ধবের প্রতি বাড়িয়ে দিবে সহানুভূতির হাত। সব সময় তাদের খোঁজ-খবর রাখবে, নিজের ভাই-নিজের বোন মনে করবে। আজকের এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নতুন করে গড়ে উঠল তাকে সুদৃঢ় ও সমুন্নত রাখবে। তোমাদের
ভালোবাসায় সিক্ত এ হৃদয় বড় আনন্দিত আজ। আজকের এই আনন্দের দিনে হৃদয়ের কোথায় যেন ব্যথা অনুভব হচ্ছে! বিদ্যালয়ের প্রয়াত আমার সহকর্মী শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী যাদেরকে আমরা হারিয়েছি, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ যাদের আমরা হারিয়েছি তাদেরকে স্মরণ করছি ও তাদের আত্মার মাগফিরাত
কামনা করছি। “পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০২২” –এর আয়োজকবৃন্দ, অংশীদারবৃন্দ ও সার্বিক সহযোগিতায়
সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও সুধীজনের প্রতি রইলো আন্তরিক মোবারকবাদ।
baliazan1987@gmail.com
প্রধান শিক্ষক
বালিয়াজান উচ্চ বিদ্যালয়
গ্রাম-বালিয়াজান,পোস্টঃহতেয়া-রাজাবাড়ি
উপজেলা-মির্জাপুর,জেলা-টাঙ্গাইল,দেশ-বাংলাদেশ